উত্তরবাংলা থেকে অসমে এসে গুয়াহাটি নিবাসি সমর দেব গেল তিন দশক ধরে কবিতা লিখে বাংলা কবিতার জগতে নিজের একটা জায়গা করে নিয়েছেন সে অনেকদিন হলো।‘আলো-অন্ধকার’ এই বইটি বেরিয়েছিল ২০০৭এর ১৫ আগষ্টে কলকাতার ‘উবুদশ’ থেকে। কিন্তু এর আগেও বেরিয়েছে তাঁর ‘যযাতি’(১৯৮৬) এবং ‘আম্মা তেরা মুণ্ডা’ (২০০৬) নামে দুখানা কবিতার বই, যেগুলো কবিতার পাঠকের চোখ এড়িয়ে যায় নি। শুধু কবিতা নয়, পেশায় সাংবাদিক সমর যেমন নিয়মিত গদ্য লেখেন, তেমনি ছোট গল্প এবং উপন্যাস। ‘এক যুগ আত্মপ্রতারণা’ (২০০৩) এবং ‘একটি গল্পের সুলুক সন্ধান’ (২০০৭) নামের দুটো উপন্যাসও তাঁর আগেই বেরিয়ে গেছে। এবং এই কবিতা গ্রন্থের পরে বেরিয়ে তাঁর ‘লোহিত পারের উপকথা’ পাঠক হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছে। উপন্যাসটি পড়তে পাবেন ‘কাঠের নৌকা’তেও ।
সমর দেব যে কবিতা নিবিষ্ট লেখক, অর্থাৎ ইচ্ছে হলেই লেখেন না, কবিতার দেশে রীতিমত বাস করেন, তা বোঝা যাবে যেকোনো কবিতা তুলে নিলেই। বইটির প্রথম কবিতা ‘উপনিষদ’ । বাকিগুলো পড়েও মনে হবে যেন তিনি উপনিষদেরই পুননির্মাণ করে গেছেন , তাঁর মতো করে। পুরাণ-উপনিষদ-মহাকাব্যগুলোর অনুষঙ্গগুলো এসছে উপমা-রূপকে, সুতরাং অনিবার্য ভাবে এসছে তৎসম শব্দসম্ভার, কিন্তু সে বড় দাঁত খটমট কিছু নয়। বরং যখন পড়ি “অনন্ত সময় ভাঙ্গে ক্রমাগত ভেঙ্গে যেতে থাকে/ ধারালো সময় মাড়িয়ে হেঁটে যায় কারা রক্ত নিয়ে বুকে” তখনতো মনেই হয় তিনি আজকের সময়কে পিছিয়ে নিয়ে যান উপনিষদের যুগে, অথবা তাকেই টেনে এনে আছড়ে পিছড়ে ফেলে দেন আজকের সময়ে।সময়ের এই নির্মাণকে ধরে যদি পড়া যায় আমাদের মনে হয় না তাঁর কবিতা হবে কঠিন কিছু। বরং অনায়াস পাঠে পাঠকের চোখ কখনো বা আটকে যাবে, এমন কিছু সুন্দর নির্মাণে, “অন্ধকার জুড়ে ব্যাপ্ত হয়ে থাকে কাঙ্খিত সমস্ত সৌরভ/সেই অন্ধকারই আলো হয়ে জ্বলে স্থির এক বিন্দুর মতো।” (আলো-অন্ধকার) কিম্বা “নিঃশব্দে প্রহর গোনে অতএব শিকারিরা আজ সব/ নিজেরাই চমৎকার সেজে গেছে মায়াবী মারীচ” (মারীচ সংবাদ)। জীবনানন্দকে নিশ্চয়ই মনে পড়বে। এই ভদ্রলোকের ছায়াটা বোধহয় রবীন্দ্রনাথের থেকেও দীর্ঘ বাংলা কবিতায়। সুতরাং এদিকটা তুচ্ছ করেই বলা যায়, হয়তো আরো অনেককেই খোঁজে পাবেন নিবিষ্ট কবিতার পাঠক, কিন্তু সব শেষে কবি সমর দেবকে খোঁজে পেতে আমাদেরতো মনে হয় না পাঠকের বেগ পেতে হবে কোথাও। আমরা ধরিয়ে দিলাম। বাকিটা পাঠকের। আমরা আশা করব আগামী দিনগুলোতে অসমের এক উজ্জ্বল এই কবির আরো গ্রন্থ আমরা আপনাদের পড়াতে পারব।
সব শুদ্ধ ৪০টি কবিতার ৪৮ পৃষ্ঠার এই বই, ‘কাঠের নৌকা’তে করে ছড়িয়ে পড়ুক। আপনাদের ভালো লাগা মন্দ লাগা এখানেই নথিবদ্ধ করুন—এই আশা এবং অনুরোধ রইল।
হতে পারে আপনাদের ফ্লাসপ্লেয়ার লাগবে নিচের পিডিএফ পড়তে। নামিয়ে নিন। একবার যদি দেখতে পান, তবে আপনার পুরো কম্পিউটারে পর্দা জুড়ে আয়েস করেও পড়তে পারেন, অথবা নামিয়ে নিন (download) , পরে পড়বেন।
No comments:
Post a Comment