বাংলাদেশের এক বন্ধু (তাঁর নাম বলা যাবে না) আমাদের অনেকদিন আগে মেইল করে এই কাগজটি পাঠিয়েছিলেন । তিনি কোনো ভূমিকা ছাড়াই পাঠিয়েছিলেন। ফলে, আমি উলটে পালটে দেখলাম আমাদের অমিতাভ দেব চৌধুরীর একটা লেখা রয়েছে অসমের বাংলা কবিতা নিয়ে আর শুভপ্রসাদ মজুমদারের একটি লেখা রয়েছে অসমের বাঙালির আত্মপরিচয়ের সন্ধানে। লেখাদুটো পড়ে নিয়ে রেখে দিলাম অবসরে পড়ব বলে। আমার কাজের একটা বড় জায়গা যেহেতু ‘ভাষা’ একদিন শব্দ ডট অর্গের কাজে এক আলোচনাতে ভাষা-উপভাষার বিতর্ক উঠাতে কবি গৌতম চৌধুরী আমাকে বললেন, ‘অগ্রবীজ’এর সাম্প্রতিক সংখ্যাতে কিছু দিশা পেতে পারি। সুতরাং আবার কিছু পড়ে নেয়া যেগুলো মূলত ভাষা নিয়ে সেগুলো বেছে বেছে। দেখলাম বাংলাদেশের কিছু বন্ধু কলকাতাশ্রয়ী ‘মানবাংলা’ প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। একে তাঁরা বলছেন ‘প্রমিত বাংলা’। কোথাওতো তাদের সমস্যা আর অভিমানের সঙ্গে আমাদের সমস্যা আর অভিমান মেলে। সুতরাং লেখাগুলো আমাকে ভাবালো, পরে পড়ব বলে আবারো রেখে দিলাম। গেল ২০শে নভেম্বর গেছিলাম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কবিতার যোগ বিয়োগ’ নিয়ে তিন সপ্তাহের এক বিদ্যায়তনিক উজ্জীবন পাঠমালাতে যোগ দিতে। সেখানে অমিতাভ দেবচৌধুরীও গেছিলেন অংশভাগী নয়, মূলত এক আমন্ত্রিত বক্তা হয়ে। তাঁর হাতে গৌতমদা আমাকে পাঠিয়ে দিলেন এই ছাপা ‘অগ্রবীজে’র সংখ্যাটি। কিছু প্রয়োজনে আর কিছু অবসরের সুযোগে কাগজটা পড়ে নিলাম। পড়ে আমার যে অনুভূতি হলো তা আমি আমার সহঅংশভাগীদের একবাক্যেই বললাম যে ‘উজ্জীবন পাঠমালার চে’ও বেশি আমাকে উজ্জীবিত করেছে এই কাগজটি।’ পরে গৌতমদার বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা দিয়ে কথাটা সরাসরি বলাটাও স্মৃতিতে ধরে রাখবার মতো এক সুখকর অভিজ্ঞতা।
কাগজটা বেরোয় আমেরিকার থেকে। এটি ৪র্থ বর্ষ, ১ম সংখ্যা ( আগষ্ট, ২০১১) । আমেরিকা আমার কাছে কোনো আকর্ষণই নয় যে কাঠের নৌকাতে তুলে এর চরিত্র হানি করব। অমিতাভ দেবচৌধুরী বা শুভপ্রসাদ নন্দীমজুমদারের লেখা আছে বলে এক নিটোল আঞ্চলিকতাবোধও আমার প্রেরণা নয়। এই কাগজ যা করেছে বা করে যাচ্ছে, তা হলো গোটা বাঙালি বিশ্বকে দু’মলাটের মধ্যে ধরে রাখবার যত্ন করেছে। আমাদের কাছে বাঙালি বিশ্বমানেতো ‘কলকাতা’ এবং তার বিলেতি চোখ। এই কাগজ সেই আবহমান ধারণাকেই যেন প্রত্যহ্বান জানিয়েছে কোনো তাত্বিক প্রেরণার থেকে নয়, নেহাতই তাঁর বিষয় বিস্তারের পরিকল্পনার থেকে। সুতরাং এক চেনা বিশ্বের অচেনা চেহারা যেন তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে। যে চেহারাতে সামান্য হলেও যোগ দিতে পেরেছে এই পূর্বোত্তর ভারতও। তাঁরা লিখেছেনঃ
এই ভাঙ্গা আয়নাটাকে জুড়ে দেবার এই যে প্রয়াস, তার থেকে আমাদের দূরে থাকবারতো কোনো মানেই নেই, বরং এতে আমাদের পূর্বোত্তরের লেখক-পাঠক চিন্তকেরাও নিজেদের মুখকে আরো স্পষ্ট দেখতে পাবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস প্রবল হলো। তাই কাঠের নৌকোতে একে তুলে দেয়া। প্রচুর চিন্তা সমৃদ্ধ প্রবন্ধের সঙ্গে ফারহাদ মাজহার এবং নবারুণ ভট্টাচার্যের দুটি অমূল্য সাক্ষাৎকারতো রয়েইছে, আর রয়েছে দুই গুচ্ছ সুনির্বাচিত গল্প এবং কবিতা।
কাগজটির সম্পাদকমণ্ডলীতে রয়েছেন, সুবিমল চক্রবর্তী, চৌধুরী সালাহউদ্দীন মাহমুদ, তাপস গায়েন, সাদ কামালী, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, এবং সৌম্য দাশগুপ্ত। এই সংখ্যার সম্পাদক সৌম্য দাসগুপ্ত। এই সংখ্যার বিশেষ উপদেষ্টা গৌতম চৌধুরী। প্রচ্ছদ করেছেন আনওয়ার ফারুক, আর অলঙ্করণ নিয়ে ভেবেছেন কালীকৃষ্ণ গুহ।
৫৮৪ পৃষ্ঠার এই বিশাল কাগজটি প্রকাশ পেয়েছে ৫১০৪ ওয়েলারা ড্রাইভ, গ্র্যাণ্ড প্রেইরী, টেক্সাস ৭৫০৫২ , যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আগ্রহী পাঠকেরা মেইল করতে পারেন প্রকাশক/সম্পাদক চৌধুরী সালাহ উদ্দীন মাহমুদকেঃcsmahmood@sbcglobal.net
কাগজটি এখানে তুলবার অনুমতি দেবার জন্যে, গৌতম চৌধুরী,সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, এবং সৌম্য দাশগুপ্তকে অজস্র ধন্যবাদ!
নিচে পড়তে থাকুন। আপনার কম্পিউটারের পুরো পর্দা জুড়েও পড়তে পারেন, আর নামিয়ে নিয়ে পরেও পড়তে পারেন অবসরে। তবে আপনার হয়তো ফ্লাপ্লেয়ারের দরকার পড়তে পারেঃনামিয়ে নিন।
No comments:
Post a Comment