পূর্বোত্তর ভারত থেকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান গল্পকার মলয়কান্তি দে গল্প লিখেছেন কম। কিন্তু যে ক'টি লিখেছেন সেগুলোই নিজ গুণে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছিল, সমর্থ হয়েছিল স্মৃতিতে সুগভীর দাগ বসাতে। অভাব ছিল তাঁর একটি প্রকাশিত সংকলনের। সেটিও দূর করেছিলেন শিলচরের 'প্রতিস্রোত' পত্রিকা গোষ্ঠী ২০১৪র আগষ্টে। তাঁরা নিজেরাই বিভিন্ন কাগজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁর গল্পগুলো সংগ্রহ করে 'আত্মপরিচয়' নামে সংকলন আকারে প্রকাশ করেন। যদিও অধিকাংশ গল্পই তাঁর প্রকাশিত হয়েছিল শিলচরেরই 'আমাদের সমকালে' । কিন্তু কাজটি সেই পত্রিকা করে উঠতে পারে নি যে কোনো কারণেই হোক। সংকলনটি প্রকাশের অল্পদিন পরেই ফুরিয়ে যায়। ইচ্ছে করলেই তিনি দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করবার উদ্যোগ নিতে পারেন। কিন্তু আপাতত একটি বৌদ্যুতিন-সংস্করণ নিজেই তৈরি করে কাঠের নৌকাতে দিয়ে পাঠকদের কাজ তিনি সহজ করে দিলেন। আমরা সেটিই এখানে তুলে দিচ্ছি। এই সংস্করণের জন্যে নিজে স্বতন্ত্র একটি ভূমিকা লিখে দিয়েছেন। সেটি হুবহু আমরা এখানে তুলে দিলাম।
বইটি অবশ্যই আপানাদের ভালো
লাগবে। সেটি রইল একেবারে শেষে। আপনি কম্পিউটারের পুরো পর্দা জুড়ে পড়তে পারেন।
নামিয়ে নিয়ে অবসরে পড়তে পারেন। আপনার শুধু দরকার পড়তে পারে এডোব ফ্লাস প্লেয়ারের, সেটি এখান থেকে নামিয়ে নিন (
ম্যাক-কাফেসিকিউরিটি সফটোয়ার এড়িয়ে যাবেন)।
মোবাইলে লেখাটি ঠিকঠাক দেখালেও প্রায়োগিক কারণে অনলাইনে কম্প্যুটারে হরফ গুলো বিশেষ করে যুক্তাক্ষর ভেঙে গেছে বা স্থানবদল দেখা যাচ্ছে। এটি আমরা ঠিক করবার চেষ্টা করেও পারিনি। সম্ভবত এম ওয়ার্ডের লুকোনো কোডের জন্যে হচ্ছে। পাঠকদের কাছে অনুরোধ বইটি নামিয়ে নিন (Download)। ঠিকঠাক পড়তে পারবেন।
[একটি নয়া বিকল্প জোড়া হয়েছে ২২ জুন, ২০২১শে। একেবারে নিচে যান। fliphtml5 ফরম্যাটে বইটি রয়েছে। সেখানে কোনও সমস্যা ছাড়াই বইটি পড়তে পারবেন। বোতাম ব্যবহার করে ছোটোবড়ও করতে পারেন। ডাউনলোড করতেও পারেন]↓↓👇👇
***
যে নগণ্য সংখ্যক গল্প আমি লিখেছি নানা সময়ে, সেগুলোর একটি সংকলন বের করার প্রস্তাব
নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন
প্রতিস্রোত গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য। আমার শর্ত ছিল
একটাই। গল্পগুলো জোগাড় করার দায়িত্ব নিতে হবে ওদের। কারণ, সেই তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগে লেখা গল্পগুলোর কোনও কপিই প্রায়
আমার হাতে নেই। এমন নয় যে সে-সব লেখা সম্পর্কে আমি এতটাই উদাসীন
ছিলাম যে নিতান্ত হেলায় ফেলায় সেগুলোকে হারিয়ে যেতে দিয়েছি। এটা ঠিক যে ট্র্যান্সফার-তাড়িত এই অগোছালো জীবনযাপনের ছিদ্রপথে বহু জরুরী নথিপত্র আমি নিয়মিত হারিয়ে ফেলতাম। তবু, আমার নিজের লেখাগুলোর প্রতি একটা টান কিন্তু সত্যিই আমার
ছিল। যেমন থাকে এক গরীব মায়ের, তার ধুলোকাদায় গড়াগড়ি দেওয়া বাচ্চাটির
জন্যে। প্রকাশ্যে কোলে নিয়ে সোহাগ দেখাতে সঙ্কোচ হয়, লোকে আদিখ্যেতা ভাববে। আদর করতে হয় আড়ালে। আমিও সেরকমই এক গোপন আদরে আমার সমস্ত প্রকাশিত লেখা সযত্নে সংগ্রহ করে রাখতাম। কী করে সেই সংগ্রহ থেকে একের পর এক পত্রপত্রিকা খোয়া গেছে, তা নিয়ে কাঁটাছেঁড়া এখন অর্থহীন। মোট কথা, ঝুলি ঝেড়ে এখন আর কিছুই খুঁজে পাই না। যা আছে তা-ও ছেঁড়া খোঁড়া, অসম্পূর্ণ। প্রতিস্রোতের
বন্ধুরা, ভাগ্যিস, আমার শর্ত মেনে নিলেন এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে, নানা জনের সহৃদয় সহযোগিতায়, মোট আঠারোটি গল্প সংগ্রহ করে গ্রন্থাকারে
সাজিয়ে দিলেন। নাম দিলেন ‘আত্মপরিচয়’। অনুষ্ঠান করে বইটির প্রকাশ ঘটল ১৬ই আগস্ট ২০১৪ তারিখে। তাদের এই পরিশ্রমের ঋণে আমি হয়ে গেলাম গ্রন্থকার। এই সুযোগে সংশ্লিষ্ট সকলকে আবারও জানাই অসীম কৃতজ্ঞতা।
প্রকাশের মাস ছয়েকের মধ্যেই শুনলাম
বইটির সব কপিই প্রায় নিঃশেষিত। আমার লেখার জনপ্রিয়তা
যে এর কারণ হতে পারে না, সেটা পাঠকমাত্রই জানেন। তবু এটা সম্ভব হয়েছে, তার একমাত্র কারণ প্রকাশকদের পরিশ্রমী বিপণন। প্রকাশকরা যথারীতি আমাকে কিছু কমপ্লিমেন্টারি কপি দিয়েছিলেন। অতিরিক্ত আরও কিছু কপি আমি কিনে নিয়েছিলাম, নানা জনকে দিতে হবে বলে। দিয়ে দিয়ে একসময় সব বই শেষ হয়ে যাবার
পর দেখলাম তখনও অনেক প্রিয়জনকে, বিশেষ করে এমন কয়েকজনকে দেওয়া হয়নি, যাদের পড়াতে পারলে আমারই তৃপ্তি হত বেশি। অনেকে আবার কিনতে চেয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, কোথায় পাওয়া যাবে। কিন্তু তখন আর কিনতেও পাওয়া সম্ভব নয়। সেই থেকেই একটা ইচ্ছে জেগেছিল,
বইটির একটি বৈদ্যুতিন
সংস্করণ বের করার, যাতে যে কেউ চাইলে পাঠিয়ে দিতে পারি। সেই ইচ্ছে থেকে
কাজে হাত দিই। নিজেই অবসর সময়ে, ল্যাপটপে টাইপ করতে থাকি। সময় লাগল অনেক, তবু এক সময় কাজটি শেষ হল।
সংস্করণ বের করার পেছনে অন্য একটি
তাগিদও ছিল। ছাপা বইটি হাতে পেয়ে পড়ে দেখলাম, সম্পাদক যুগলের আন্তরিক চেষ্টার
পরেও এমন কিছু মুদ্রণ-প্রমাদ রয়ে গেছে, যার ফলে পড়তে গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে, কোথাও বাক্যের অর্থবিকৃতি ঘটেছে, কোথাও বা উদ্দিষ্ট বক্তব্যটাই অধরা
থেকে গেছে। এর জন্য সম্পাদকরা দায়ী নন।
কারণ আমার বেশির ভাগ লেখা ছাপা হয়েছিল সেই সত্তর আশির দশকে, যখন আমাদের লেটার প্রেসগুলো তেমন
উন্নতমানের ছিল না, সম্পাদকরাও সবাই নির্ভুল ছাপার ব্যাপারে তেমন নিষ্ঠাবান হতেন না। ফলে ছাপাখানার ভূতেদের একটা সর্বময় কর্তৃত্ব বিরাজমান
ছিল। আমার নিজস্ব কপিগুলিতে আমি অন্তত নিজের লেখাটির ভুলভ্রান্তি
যা চোখে পড়ে, শুধরে রাখতাম। কিন্তু আমার সে-সব কপি হাতছাড়া হওয়ায় সম্পাদকদের
নির্ভর করতে হয়েছে তাদের সংগৃহীত পত্রপত্রিকার ওপর, যেখানে এ জাতীয় কোনও সংশোধন নেই। বানানের ব্যাপারে ওরা যথেষ্ট যত্ন নিয়েছেন। কিন্তু বানানের ভুল তো নিরীহ ভুল। অন্য কিছু ভুল থাকে যা আসলে লেখাটিতে সত্যিকারের অনর্থ ঘটায়। কোথাও দু’তিনটে শব্দ বা গোটা একটা লাইন, এমন কি একটা প্যারাগ্রাফই ছাপা হয়নি, কোথাও কোনও শব্দ ভুল করে এমন ছাপা
হয়েছে যে আসল শব্দটি আন্দাজও করা যাচ্ছে না, কোথাও যতিচিহ্নের ভুলে বাক্যটি ভিন্নতর অর্থ ধারণ করে
বসে আছে। লেখক নিজে হয়তো সে সব ভুল ঠিকঠাক
অনুধাবন করতে পারবেন, কিন্তু অন্যদের পক্ষে এ কাজ অসম্ভব। অন্তত দু-চারদিনের জন্য গিয়ে একবার নিজের
চোখে প্রুফ দেখে আসা উচিৎ ছিল। সেটা সম্ভব হয়নি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। প্রকাশের পর বইটি হাতে পেয়ে এরকম বহু বহু ভুলের সন্ধান পেয়ে আক্ষেপ করা ছাড়া
আর কিছুই সম্ভব ছিল না। এই বইয়ের তো আর কোনও ছাপা সংস্করণ হবে না, তাই শুধরে নেবারও সুযোগ নেই। এ ছাড়া, যে কোনও লেখকই তার পত্রপত্রিকায় ছাপা লেখাগুলো গ্রন্থাকারে
প্রকাশ করার সময় লেখাটিতে কিছু কিছু অদল বদলের স্বাধীনতা নেন। সুযোগ পেলে আমিও এটা করতাম। এখন একমাত্র এই
ই-সংস্করণটাই আমাকে
সুযোগ করে দিল, যাবতীয় ভুল শুধরানোর সঙ্গে কিছু কিছু পরিমার্জনারও। ছাপা বইটির হরফ বিন্যাস এবং অঙ্গসজ্জার আরও কিছু টুকিটাকি আমার পছন্দ হয়নি, কিন্তু সে সব ব্যাপারে এই ই-সংস্করণেও আমি নিরুপায়। এটা পুরোপুরি আমার অপটু হাতের কাজ। এখানে কারিগরী কৃৎকৌশল আশা না করাই ভাল।
তৃতীয় কারণটি আমাকে এই
ই-সংস্করণের কাজে উদ্বুদ্ধ করেনি যদিও, তবে কিছু কথা বলার সুযোগ করে
দিয়েছে যা অন্যত্র বলার অবকাশ ছিলনা। বইটির শুরুতে
সম্পাদকদের কলমে ‘সংকলণের মর্মকথা’ শিরোনামে একটি লেখা রয়েছে। আর শেষে রয়েছে পার্থপ্রতিম মৈত্র-র লেখা একটি আখ্যানোত্তর পৃষ্ঠা। দুটো লেখা সম্পর্কেই আমার কিছু কহতব্য আছে। ‘সংকলণের মর্মকথা’ লেখাটি বই ছাপা হওয়ার আগে আমাকে মেল করে পাঠানো
হয়েছিল। সেটা পড়ে আমি কিছু বিষয়ে
সম্পাদকদের মনোযোগ আকর্ষণ করি, স্পষ্টতই লেখাটিতে কিছু পরিবর্তন আশা করে। কিন্তু আমাকে জানানো হয় যে পুরো গ্রন্থটি ফাইন্যাল
প্রিন্টের জন্য প্রস্তুত, এখন আর কোথাও কোনও অদল বদল সম্ভব নয়। এমনিতে সম্পাদকরা তাদের কলমে কী লিখবেন, সে বিষয়ে লেখকের কোনও ওজর আপত্তি খাটে কি না আমি জানি না। কিন্তু বইটি যেহেতু
শেষ পর্যন্ত লেখকেরই, তাই এর অন্তর্গত কোনও বিষয়ে লেখকের মতামত বিচার্য হবে
না, এটা ভাবতে কষ্ট হয়। সবিস্তারে না গিয়ে শুধু এটুকু জানাতে চাই, এই লেখাটিকে আমার মনে হয়েছে নেহাতই কিছু দিশাহীন আলাপচারিতা। মূল প্রসঙ্গ থেকে অনেকখানি সরে গিয়ে এখানে এমন কিছু
বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে, যার সঙ্গে এই সংকলনের কোনও সঙ্গতি আমি খুঁজে পাই নি।
উদাহরণ-স্বরূপ, যজ্ঞেশ্বর দাস প্রসঙ্গ অথবা সুজিত চৌধুরীর গবেষণামূলক
কাজটি হারিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ। এ ছাড়া আরও কিছু তথ্য সেখানে দেওয়া হয়েছে, যার শুদ্ধতা যাচাই করে নিলে কিছু অসত্য কিংবা অসম্পূর্ণ তথ্য ছাপার অক্ষরের
প্রতিষ্ঠা পেত না।
এর পর আসি আখ্যানোত্তর পৃষ্ঠাটি
সম্পর্কে। এটা লিখেছেন পার্থপ্রতিম মৈত্র। এই আখ্যানোত্তর পৃষ্ঠার প্রয়োজন কী ছিল
আমি জানি না। লেখাটিতে পার্থপ্রতিম আমার লেখা সম্পর্কে ন্যারেটিভ, নন-ন্যারেটিভ, ফিকশন, নন-ফিকশন জাতীয় কিছু কাটাছেঁড়া করে
শেষ পর্যন্ত আমার এই ছাঁচে- না-পড়া লেখন-শৈলীকে পাঠকের কাছে গ্রহনযোগ্য করার উদ্দেশ্যে কিছুকিঞ্চিৎ
ওকালতি করেছেন। এবং এটাও সদম্ভে জানিয়েছেন যে গত
পঞ্চাশ বছর ধরে বিশ্বসাহিত্যের এক নিবিড় পাঠিক হিসেবে এটা তার অধিকারে পড়ে। আমি কিন্তু এই বিচার পাঠকের হাতে ছেড়ে দিতেই বেশী পছন্দ
করতাম। এ বিষয়ে তিনি যা লিখেছেন সে সবই তার নিজস্ব
উপলব্ধিজাত। লেখক হিসেবে আমি তার বক্তব্যের সাথে একমত হওয়া বা না হওয়াতে কিছু যায়
আসে না। আমি তাই সে প্রসঙ্গে নিরুচ্চার থাকছি। কিন্তু যেখানে তিনি তার নিজস্ব কিছু কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি টেনে সে-সবের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাক্তি
মলয়কান্তি-র সঙ্গে তার যৎসামান্য সংযোগের উল্লেখ করেছেন, সেখানে তিনি এমন এক স্বনির্বাচিত
উচ্চতায় নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন, যেখান থেকে অতীতকে দেখার দূরবিনটা উল্টো করে ধরতে হয়। ‘ডেটলাইন আসাম’ নামক সংকলনটি সম্পাদনাকালে আমার
একটি কবিতা হাতে পেয়ে তার না কি প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘মলয়কান্তি? নামই শুনিনি!’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য যখন তার
সমস্ত প্রস্তুতি প্রায় সারা, শুধু আটকে আছেন একটা পছন্দসই গল্পের জন্যে, ‘কে যে তখন আসরাফ আলির স্বদেশ নামে
একটা গল্পের খোঁজ দিয়েছিল তা আজ আর মনে নেই’। এ জাতীয় সমস্ত উক্তিতে তিনি এই গল্পকারের প্রতি
তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে আসলে এক নিজস্ব উচ্চতা নির্মাণ করতে চেয়েছেন, এবং পাঠকদেরে সেই উচ্চতার পরিমাপ বোঝানোই তার অভীষ্ট বলে ধারণা জন্মায়। যে পার্থপ্রতিমকে আমি চিনতাম, তিনি আমার অনুজপ্রতিম এবং স্নেহভাজন। আসাম ৮৩ সম্পাদনার অনেক আগে থেকেই তার
সাথে পরিচয়। তার বর্তমান উচ্চতার সঠিক মাপ আমার জানা নেই, তাই সে সম্পর্কে কোনও প্রশস্তি গাইতেও আমি অপারগ। তবে অতীত পরিচয়ের স্নেহবন্ধন থেকে মুক্ত নই বলে ক্ষোভ প্রকাশেও আমাকে সংযমের শাসনে থাকতে হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে আর কিছু না লিখে শুধু এই ই-সংস্করণের
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে কিছু তথ্য জানানোর প্রয়োজন বোধ করছি।
‘আসরাফ আলির স্বদেশ’ নামে আমার একটা গল্পকে ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্র
নির্মাণ করেছিলেন পার্থপ্রতিম। আমার স্মৃতি
কিন্তু জানান দিচ্ছে, এই চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রসঙ্গেই তার সঙ্গে আমার প্রথম
মুখোমুখি কথা। এর আগে তাকে চিনতাম, নাটক করেন, কবিতা লেখেন, গণতান্ত্রিক লেখক সংস্থার তরুণ
সদস্যদের একজন। অন্য সভা-সমিতিতেও দেখা হত। কিন্তু কথা তেমন হয়নি। আমার এই গল্পটি ছাপা হয়েছিল ‘আমাদের সমকাল’ পত্রিকার জুলাই, ১৯৮২ সংখ্যায়। লেখা হয়েছিল তারও এক দু’মাস আগে। সেই গল্প আমি প্রথম
পড়ি গণতান্ত্রিক লেখক সংস্থারই এক সাহিত্যসভায়, যেখানে পার্থপ্রতিম উপস্থিত
ছিলেন। সে রাতে আমি এই সভার আয়োজক অপরেশ ভৌমিকের মেহেরপুরের কোয়ার্টারেই ছিলাম। এবং সেখানেই পার্থপ্রতিম তার এক বন্ধু সহ এসে রাতে
আমার সঙ্গে দেখা করেন। পার্থপ্রতিম আমার সদ্যপঠিত
গল্পটি নিয়ে আলোচনা করেন এবং একসময় জানান যে উনি এই গল্প ভিত্তি করে একটি
চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চান। জানা ছিল না
পার্থপ্রতিম তখন চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যাপারেও ভেতরে ভেতরে উদ্যোগী। প্রায়
ঘন্টাখানেক কথা হয় তার সঙ্গে। সেটা ১৯৮২ সনের জুলাইয়ের আগের কোনও একটা সময়।
প্রাথমিক দ্বিধা কাটিয়ে আমি সম্মতি দিই এবং এর পরই তিনি এই চলচ্চিত্র নির্মাণের
কাজ শুরু করে দেন। এর অনেক পরে, ‘আসাম ৮৩’ নামক সংকলনটি সম্পাদনার সময় আমার কবিতাটি হাতে পেয়ে
তার মনে হয়েছে, ‘মলয়কান্তি? নামই শুনিনি!’ আমি কি উপযাচক হয়ে কবিতাটি পাঠিয়েছিলাম তার কাছে? কলেজ জীবনের শুরুতে দু একটি উদাহরণ বাদ দিলে নিজের থেকে কোথাও লেখা পাঠানোর
কোনও নজীর আমার ছিল কি তখন? এটা আমার অহংকারের কথা নয়। দুর্বলতার কথা। চিরকালই কম
লিখি বলে আমার লেখা হত কেবল সম্পাদকের তাড়ায়। এ ক্ষেত্রেও পার্থপ্রতিমই তাড়া দিয়ে লিখিয়েছিলেন কবিতাটি। নইলে আমি তো তখন কবিতা আর লিখিই না। এর পরও তার মনে হল, নামই শুনিনি? বিস্মরণের একটা ভয়াবহ পর্যায়ে মানুষ জানেও না যে তাকে
বিস্মরণ-রোগে পেয়েছে। তাই নিজের স্মৃতিতে ধরা তথ্যকে চূড়ান্ত মনে করে। পার্থপ্রতিম
যদি অন্য কোথাও আমার সম্পর্কে এ জাতীয় তাচ্ছিল্যবাচক উক্তি করতেন, আমি হয়তো স্বভাবসুলভ ঔদাসীন্যে এড়িয়ে যেতাম। কিন্তু আমারই গল্প-সংকলনের আখ্যানোত্তর পৃষ্ঠাটাই কি তার আমার প্রতি তাচ্ছিল্য
দেখানোর উপযুক্ত পরিসর বিবেচিত হল? একবার ভেবেছিলাম, ই-সংস্করণে দু’টো লেখাই বাদ দেব। কিন্তু দিলাম
না। আমার ভাবনায় ভুলও থাকতে পারে। তাই পাঠক ইচ্ছে করলে আমার এই ভূমিকা সহ দুটো
লেখাই পড়ে নিজস্ব অভিমত স্থির করুন। তা-ছাড়া, এটা যেহেতু মূল গ্রন্থটির ই-সংস্করণ মাত্র, এখানে আমি যথাসাধ্য মূলানুগ
থাকার চেষ্টা করছি। ঠিক এই কারণেই মূল সংকলনে প্রকাশিত না হওয়া কোনও গল্প এখানে
সন্নিবিষ্ট করি নি। ২২-০৩-২০১৭।
ফ্ল্যাট নং ৪০৫, দক্ষিণী ফেজ ২,
আই-২৩/১ বৈষ্ণবঘাটা পাটুলি টাউনশিপ মলয়কান্তি দে
কলকাতা ৭০০০৯৪ সেলফোন ৮৮১১০৬০৩২৮
আত্মপরিচয় by Sushanta Kar on Scribd
No comments:
Post a Comment